জুলাই আন্দোলনে নিহত/ আহতদের অনুদান
মধুপুরে ৬ মাস পর আন্দোলনের হৃদয়স্পর্শী স্মৃতিচারণ

- আপডেট সময় : ০১:১৪:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ৯৭ বার পড়া হয়েছে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী আহতগণের হৃদয় স্পর্শী বর্ণনা শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো। কি ভয়াবহ চিত্রই না বক্তব্যে তুলে ধরলেন আহতরা। আন্দোলন পরবর্তী চিকিৎসায় কত প্রতিবন্ধকতা তাদের সামনে এসেছে । ৬ মাস পর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন নিজ জীবনকে তুচ্ছ করে জুলাই বিপ্লবে অংশ নেয়া টগবগে তরুণরা। সংসারের আর্থিক সংকটের বিষয়টিও বাদ পড়েনি তাদের বক্তব্যে। অজানা আর অপ্রকাশিত তাদর বর্ণনা উপস্থিত অনেকের হৃদয় স্পর্শ করেছে। মনের অজান্তেই কেউ কেউ চোখের জল লোকানোর চেষ্টা করেছেন।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত মধুপুর উপজেলা প্রশাসনের চতুর্থ তলার কনফারেন্স রুমে উপজেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ আয়োজিত জুলাই বিপ্লবে অংশ নেয়া আহত/ নিহতদের অর্থ সহায়তা প্রদান শীর্ষক অনুষ্ঠানটি পরিণত হয়েছিল স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে। ওই অনুষ্ঠানে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা জুবায়ের হোসেন।
অনুষ্ঠানে আন্দালন চলাকালে মামলার আসামী হয়ে মধুপুর থেকে ঢাকায় গিয়ে আন্দোলনরত অবস্থায় আহত সোহানুর রহমানের সোজা সাপ্টা বক্তব্য সবাইকে ব্যথাতুর করেছে। দেশের জন্য আন্দোলনে অংশ নেয়া পরিবারের একমাত্র অবলম্বন সোহানুর এখন নিজের ভবিষ্যত ভাবনায় এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। তবুও নতুন করে দেশ গঠনে তিনি বিপ্লবের চেতনা ধারণ করতে সবাইকে অনুরোধ করেছেন। আহতদের সুচিকিৎসা, নিহতদের মূল্যায়ন ও পরিবারের খোঁজ খবর নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
সফিপুর আনছার একাডেমি এলাকায় আন্দোলনে অংশ নিয়ে ছিলেন মধুপুরের সোহাগ। তাইওয়ান বিডি কোম্পানিতে চাকরিরত সোহাগ রানা ৫ আগস্টের আন্দালনে গিয়ে ছড়া গুলির শিকার হয়েছেন। ২ শতাধিক গুলির এখনো শতাধিক দেহে বয়ে বেড়াচ্ছেন। তার বক্তব্যেও উঠে এলো কষ্টের কথা। তিনি সোহানের মতোই দাবি করলেন। সাথে যুক্ত করলেন সমাজে এখনো পতিত ফ্যাসিষ্টদের বিচরণের কথা। আসামীদের ঘুরে বেড়ানোর বিষয়, স্বৈরাচারের দোসর, ভাগিদারদের হুমকি দেয়ার ভয়ানক তথ্য। খালিদ মুজাহিদ,সাইদুররাও একই সুরে আহত হওয়ার কাহিনী তুলে ধরলেন অনুষ্ঠানে। এ সময় অনুষ্ঠানে এক চোখ হারানো খায়রুল, শহীদ লাল মিয়ার স্ত্রী আলপনাসহ অন্তত ১৫ আহত উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দােলনের নেতা ও ও জাতীয় নাগরিক কমিটি মধুপুর উপজেলা প্রতিনিধি সদস্য এস এম সবুজ, মাযাহার, মেহেদী হাসান মৃদুল, নাঈম প্রমুখ।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোস্তফা হোসাইন পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে আবেগ তাড়িত বক্তব্য দেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমরানুল কবির। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা সুমি, প্রতিবন্ধী কর্মকর্তা মুসলিমা আক্তার, মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন সরকার, জামাত নেতা রেদোয়ান, সাংবাদিক আনোয়ার সাদাৎ ইমরান প্রমুখ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
আন্দোলনে নিহতদের আত্নার শান্তি, আহতদের সুস্থ্যতা এবং সমতা- ন্যায্যতার ভিত্তিতে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রত্যাশা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। শেষে অনুষ্ঠানে আর্থিক অনুদান বিতরণ করা হয়। শহীদ লাল মিয়ার স্ত্রী আলপনা বেগম, আহত- সাইদুর রহমান ও সোহানুর রহমানকে ১০ হাজার করে মোট ৩০ হাজার টাকা এবং বাকী ১২ জনকে ৫ হাজার করে মোট ৬০ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে ১৫ জনকে সর্বমোট ৯০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়।