১৬ বছর পর আবারো অনুষ্ঠান স্থগিত
এবার দুই ধর্মীয় সংগঠনের বাধায় মধুপুরে লালন স্মরণোৎসব স্থগিত

- আপডেট সময় : ১০:০০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১০ বার পড়া হয়েছে

আধ্যাত্মিক ও ভাব সংগীতের স্রষ্টা সাঁইজি খ্যাত লালন শাহ’র স্মরণে টাঙ্গাইলের মধুপুরে একাধিকবার লালন স্মরণোৎসব বাধাহীনভাবে অনুষ্ঠিত হলেও এবার দুই ইসলামী সংগঠেনর বাধার মুখে অনুষ্ঠানের দিন লালন সংঘ কর্মসূচি স্থগিত করেছে। এর আগে ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকার (ওয়ান ইলেভেন) সময়ে ১৪ এপ্রিল মধুপুর প্রথম প্রতিরোধ দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজনও রহস্যজনক কারণে ভন্ডুল হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এ কে খন্দকার।
বুধবার রাত ৮ টায় মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে লালন স্মরণোৎসবের কর্মসূচি পালন হওয়ার কথা ছিল। দুপুর থেকে এলাকায় মাইকিং করে সংগঠনটি অনিবার্য কারণে অনুষ্ঠান স্থগিত করে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. সবুজ মিয়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার ওয়ালে
একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে কৈফিয়তে লিখেছেন, হেফাজত ইসলাম ও ওলামা পরিষদ মধুপুর শাখার বাধায় অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না। তিনি লিখেছেন,
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর লালন সংঘ মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে লালন স্মরণোৎসব নামে দুইবার বৃহৎ পরিসরে লালন সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। এবছর লালন স্মরণোৎসব’২০২৫ নামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রধান অতিথি করা হয়।
তিনি বলেন,আয়োজন পূরোদমেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই খবর আসে মধুপুর হেফাজতে ইসলাম আমাদের অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। হেফাজতের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সাথে ১১ ফেব্রুয়ারি বাদ আসর বসার ব্যবস্থা হয়। উপজেলা হেফাজতের সভাপতি মুফতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাও. মাহমুদুল্লাহ, কওমি উলামা পরিষদের সভাপতি মাও. সোলায়মান কাসেমীসহ তাদের ১০-১৫ জন উপস্থিত ছিলেন। লালন সংঘ থেকে সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন তরফদার এবং অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহবায়ক হিসেবে তিনি উপস্থিত ছিলেন। মধ্যস্থতায় ছিলেন মধুপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জাকির হোসেন সরকার।
ফরহাদ তরফদার ও সবুজ জানান, ইসলামিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ তাদের জানিয়েছেন লালনের মতাদর্শ নাজায়েজ, কুফরি বা শিরক। তারা এই ভ্রান্ত মতাদর্শ মধুপুরে প্রচার করতে দিবেন না।
লালনে মতাদর্শ নিয়ে কোন আলোচনা ইতোপূর্বে হয় নি এবারও হবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা মানেননি । মধুপুরের সার্বিক আইন শৃঙ্খলার অবনতির শঙ্কায় অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।। যারা অনুষ্ঠানের আয়োজনে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন, এবং যারা এই অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছেন।
এদিকে হেফাজত ইসলাম মধুপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদউল্লাহ বাধা দেয়ার কথা স্বীকার করে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অনুষ্ঠান করতে মানা করা হয়েছে।
কওমী ওলামা পরিষদ মধুপুর শাখার সভাপতি সোলেমান কাসেমীর বক্তব্য নিতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবির ছুটিতে ছিলেন জানিয়ে বলেন, আজ বুধবার বিকেলে এসে শুনেছি ইসলামী দলগুলো অনুষ্ঠান করতে বাধা দিয়েছে।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর্জা জুবায়ের হোসেন জানান, দুই পক্ষের কথাবার্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠান স্থগিত হয়েছে শুনেছি। কারো বাধা দেয়ার বিষয়টি তিনি অবগত নন।