বন্ধুমহলের মিলন মেলা
সম্পর্কের যে আলো নিভবে না

- আপডেট সময় : ০৩:৫৮:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ৩২৮ বার পড়া হয়েছে

“একটা কথা আছে বাংলাতে, মুখ আর বুক বলে এক সাথে, সে হ..লো ব…ন্ধু, বন্ধু আমার……..”। এই বন্ধু ছাড়া জগতে কারো শেকড়ের বন্ধন নেই। সেই বন্ধু ছাড়া জীবন অচল। বন্ধুত্বের বন্ধনের সেই পথ চলার পরতে পরতে থাকে গল্প আর খুনসুটিতে পূর্ণ। যে গল্পে থাকে ছন্দ অছন্দের মিশেল। বন্ধুত্বের শক্তিতে এগিয়ে চলার স্বপ্নে দিগন্ত অসীমে মিললেও চলার পথে থাকে না কোনো সীমা। তবুও বন্ধুত্ব অমলিন, বন্ধন থাকে সুদৃঢ়, ইস্পাত কঠিন, স্বপ্ন থাকে অবারিত। সেই ঐক্যবদ্ধ বন্ধুদের পথচলা শেষ হয় না- তাদের জন্যই রচিত থিম সংগীতের অংশ বিশেষ
“তোমরা আছো হৃদয়ের ভেতর,
প্রতিটা গল্পে, প্রতিটা ছন্দে,
বন্ধু মহল, পথচলা শেষ নয়,
এগিয়ে যাবো স্বপ্ন আনন্দে!”
এমন স্বপ্ন ভিত্তিক থিম সঙ করে বন্ধুদের মিলন মেলা সম্ভবত মধুপুরে এই প্রথম। বন্ধুমহলের ধারাবাহিক উদ্যোগে এমন প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো এবার। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মধুপুর বনের চুনিয়া কটেজ অর্থাৎ পিকনিক স্পটে ১৯৯৩’র এসএসসি ব্যাচের নেতৃত্বে ৭৭ বন্ধু তাদের ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে মিলিত হয়েছিল ওই কটেজে। আনন্দ আর হৈ হল্লোড় করে তাদের কেটেছে পুরোদিন। দিনের শুরুটা মাছরাঙা টিভির ভিডিও এডিটিং সেক্টরের প্রধান বন্ধু আলী হাসান রূপনের সৃষ্টি বন্ধু আর বন্ধনের আলোচ্য থিম সঙে অভিভূত হয়েছেন সব বন্ধু। পুলক শিহরণে লাইফ পার্টনার(স্ত্রীরা) আন্দােলিত ছিলেন সারা বেলা। উত্তরসূরীরা (সন্তানরা) বাবা মায়েদের আনন্দ মিলনের নির্জলা অভিজ্ঞতায় ভাগ বসিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় উৎসাহ পেয়েছে। সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনার স্বপ্নে রসদ নিয়ে বাবা মায়ের গর্বিত বুককে প্রসারিত করতে হয়ত উৎসাহ যুগাবে।
তারই প্রাথমিক ধাপ বাবা মায়েদের সাথে মিলন মেলার ১৯টি কর্মসূচির শিরোনামের আইটেমে অংশ নিয়ে যুগপৎ পুরস্কৃত হয়ে সার্থক করলো তাদের পূর্বসূরিদের(বাবা মায়েদের) আয়োজনকে। নাচ গানসহ নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানকে দিয়েছিল ভিন্নমাত্রা। ছিল ভাগ্য পরীক্ষার লাকি কুপন ড্র। যন্ত্রী যন্ত্রের তাল লয়ের নিয়ম না মেনেই স্ত্রীরা সংগীতে যা দিয়েছেন তার উপযুক্ত পুরষ্কার বন্ধুমহল দিতে পারেনি। তবে ঘোষক বন্ধু দোয়েলের বন্ধুমহলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থায় এমন উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাসে পুরষ্কার প্রাপ্তির সে আশা হয়ত অনেকে জিইয়ে রাখলেন।
প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে লাকি কুপনে প্রথম পুরষ্কার প্রাপ্তির বন্ধুটার যে আনন্দ তার চেয়ে যারা তাকে মিলন মেলায় বন্ধুত্বের শক্তি খাটিয়ে এনেছিলো তাদের বাঁধ ভাঙা আনন্দ ছিল নির্জলা। বল নিক্ষেপ বা চেয়ার খেলা কিংবা অন্ধের পাতিল ভাঙার পুরষ্কার প্রাপ্তি তো মৌসুমি আক্তার,রুনা লায়লা,স্বপ্না খাতুন, সাবিনা, রাশিদা, শাপলা, রাজন বিএসসিকে শুধু আনন্দ দেয়নি, পুরো মিলন মেলাকে উদ্বেলিত করেছিল। উত্তরসূরীদের মোরগ, বল, বিস্কুট খেলার জয়ের স্বীকৃতি জাহাঙ্গীর, খ.কবির, আব্দুল হাইরা ছড়িয়ে দিয়েছেন মেলার সকল বাবা মাযের মাঝে। জুয়েলের খাবার পরিবেশনায় ছিল সংগীতের তাল লয়ের সরল রেখা। শেষ দিকে বন্ধুবর মধুপুর থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ (রেজিষ্ট্রেশন করা) এমরানুল কবিরের অনুষ্ঠান স্থলে পৌছানোর বিলম্ব উদ্বেগ তৈরি করেছিল। তবে আগের দুই ওসি (১৯৯৩ ব্যাচ) মাজহারুল আমিন ও আজিজ মোল্লার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি বন্ধুমহলের মিলন মেলার খাওয়া পর্বে যোগ দিয়ে উৎসাহের পাল্লায় ভর বাড়িয়েছেন। বক্তব্য দিয়ে কর্তব্যে ফিরলেও আমরা তাকে পাশে থাকার অনুভূতিতে রেখেছি।
সাবেক ওসি আজিজ মোল্লার উপস্থিত থাকার ব্যাকুলতা ও না থাকার মনোকষ্ট আমাদের পীড়া দেয়নি, ভালোবাসার সম্পর্ক গাঢ় হওয়ার পথে এগিয়েছে। বন্ধুদের সাথে রুবি নিগারের ফটোসেশনে সাবলিল অংশগ্রহণ ভুলবার নয়।
সমস্ত মিলন মেলার আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্ততা কামাল হোসেন পারিবারিক সমস্যা(স্ত্রী অসুস্থ)কে সবার আড়ালে রেখে সুষ্ঠু সমন্বয় করে আমাদেরকে সফলতার ঋণে আবদ্ধ করেছে। মঞ্চ পরিচালক সুদর্শন শিপলু তারুণ্যকে স্মরণ করিয়েছে ।
ইভেন্ট পরিচালনায় মঞ্জুর ভারিক্কি ভাব শৈশবকে একবার হলেও ভাবিয়েছে এমন অনেকেই মাঠে ছিলেন, আমি সিউর। মঞ্চে মিউজিকের তালে ফ্যাশন হাউজের শহিদুলের আউলা ঝাওলা নাচে আমাদের তাল মেলানোর দৃশ্য নজর এড়ায়নি। বন্ধু সুজিত সরকারের দরাজ কন্ঠের গান ও অতিথি শিল্পীর পরিবেশনা ছিল উপভোগ্য। মিলন মেলাতে জোসনা, আকলিমা, রোজি তানিয়াদের উপস্থিতি বন্ধুমহলের সামনের দিনের পথচলাতে অগ্রিম অভিনন্দিত করেছে। আয়োজনে মানিক, প্রবাসী বন্ধু পলাশ, ইউসুফ,হানিফসহ স্পন্সরদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অকার্পণ্য ভবিষ্যতে অপরাপর বন্ধুদের আগ্রহ বাড়াবে এটা সহজে অনুমেয়। সরব বন্ধু ছানোয়ার নিরব থাকা ছিল রহস্যময়৷ চির কুমার তাপস নিয়োগী স্ত্রী সন্তান নিয়ে মিলন মেলায় উপস্থিত না হওয়ার দুঃখবোধ আমাদেরকে তাড়িত করলেও সে কিন্তু বন্ধুদের দিয়েই দইয়ের সাধ গোলে মিটিয়েছে। টু ইন ওয়ানের বন্ধু আলীমের মেয়ে আফরিন প্রস্তুত থেকেও অনুষ্ঠান পরিচালনা শেষ করতে দৈব্য দুর্বিপাক বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
ইতোমধ্যে হারানো দুই বন্ধুকে (শরীফ ও সত্যজিৎ) আনুষ্ঠানিক স্মরণ করে তাদের শূন্যতায় ব্যথিত হওযার মুহূর্ত সবাইকে ব্যথাতুর করেছে। অসুস্থ শরীরে মিলন মেলায় অংশগ্রহণকারী বন্ধু আওয়ালের নেতৃত্বে প্রার্থনা করেছি তাঁদের বিদেহী আত্নার শান্তির জন্য।
এতোসবের পর বন্ধুমহলের এবারের আয়োজন ছিল উপভোগ্য। সবাইকে ঋদ্ধ করেছে। আগামী আয়োজনের সফলতাকে যা লক্ষ্যে পৌঁছুতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। নতুন শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাব সে প্রত্যাশার সাথে বন্ধুদের প্রতি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য অবিরাম কল্যাণ কামনা থাকলো। বন্ধুত্ব থাকুক চির অম্লান। থিম সঙের একটি অংশের কথা দিয়ে শেষ করছি-
“সময়ের স্রোতে ভাসবো না,
থামবো না, হারবো না!
বন্ধু আছে, আলো আছে,
সেই আলো নিভবে না!”
শালবনবার্তা২৪.কম/এসআই